জন্মদিন উপলক্ষে কয়েকটি কবিতা

















কবি তুষার গায়েন বলেন “আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ এক মৃদু, অন্তর্লীন, জাদুময় ভাষায় কবিতা লেখে চলেছেন, যেখানে শব্দগুলো পারস্পরিক রসায়নে অর্থ তৈরী করে, যে বিষয়ে আমরা কোনো পূর্ব ধারণা করতে পারিনা; শুধুমাত্র পড়ার পর চকিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে অর্থ ও ব্যঞ্জনাসহ। সাঈদের কবিতার বৈশিষ্ট্য হ’ল, আলগোছে কথা বলে যাওয়ার এক সরল ভঙ্গিমা, যেন তেমন কিছু বলবে বলে সে কলম ধরেনি, অথচ নিশ্চেষ্টভাবে গভীর অনুভবের কথাগুলো বলা হয়ে যাচ্ছে। এবং তা হচ্ছে এমন এক অননুকরণীয় ভাষা ও যাদুময়তায় যে পাঠক পড়ামাত্র তা ভালোবেসে ফেলছে, অর্থ উদ্ধারের অপেক্ষা না করেই। "





মঞ্চ

পোশাকের জাদু ধরে উঠে আসছে ছায়া
উড়ছে হাওয়া- পাতার প্রপেলার
সকালের জলপ্রপাত কোন ভাষায়
করে মৃদু আলিঙ্গন।
ডানা মেলে ছেলেমেয়েরা নামছে
আর জাপটে ধরছে আলোধারার পতঙ্গ।
খালি বুক খোলাচুল
সংঘ আর নিতম্বে
উড়ে চলা সার্কাসের গতি
নেমে পড়ছে তন্দ্রপ্রবণতা নিখিল অসীমে।

এই শীত সকালের মঞ্চেও
ফলে যাওয়া ভবিষ্যৎ
শরীর ছেড়ে শূন্য শূন্যতায়
অচেনা ছায়ায় দেহ গ্রহণের অংশ।
যে নামে নৃত্যশিল্পে রূপের আদিমে
তার চুলে বাসা বাঁধে কোন মৃত্যুহীন পাখি!

২৫/০৬/২০১০


ফেলে আসা ছায়া

ফেলে এসেছি যাদের তাদের বাড়ির কাছে
এই ঋণপত্র বাহুবন্ধনের লাল।
যারা থাকে তাদের বাল্যবাতাস হানা দেয়
ভেসে আসা অজগর, ট্রলারের দেশে
লেবুপাতার শয্যায়।
আর কানে লাগা এই টেলিফোন পার করে
কুলে দাঁড়ানো অপেক্ষমান ঘাটিদের।
সকালের গান শুনে ঝুঁকে আসে দেহ
ফেলে আসা লাটিমের মায়ায়
প্রাণ ছুটে চলে জলহস্তীর বেগে।

হাটুভেঙ্গে বসে থাকি মেয়েদের খেলনায়, পুতুলে
কবে এই কাঠের আত্মীয়তা শেষ হয়
ঘটে যোগাযোগের পত্রভাষা ইস্পাতের বাণিজ্যে।
মাতৃনির্ভরতার ঘাস সবুজ হয়ে আছে বারান্দায়
শিশুদের রোলটানা অ্যালজেব্রা খাতায়-
বানরের ওঠানামা- প্রাকৃতিক ইভল্যুশন।
একদিন নিজের তৈরী সীমানা ভাঙ্গে -
ফেলে আসা ভোররাতের ছায়া।

১৭/০৪/২০১০




ফেরিওয়ালা

ভাষা বানিয়ে ফেরি করছি
রেলস্টেশন, দোকানের আলোয়।
সামনে সাপখেলা
ভূমিযুদ্ধ সৈন্য সিপাহীদের।
ঘাড় থেকে পিঠ আলাদা করে
ঘুরিয়ে এনেছি ঘাসে;
ঘাসে ঘাসে দোল খায় ছিঁড়ে যাওয়া প্রাণ
আলিঙ্গন প্রবণতা,
কেউ যদি দরোজা খোলে এই ভাষাবাণিজ্যে।

পিয়ানোর নিদ্রা বদল করে চলে গেছে
আইবুড়ো মেয়েদের দল,
বাহিরে দাঁড়ানো প্রজাপতির সংঘ জানে-
তাদের শরীরে কেন এত বিনিময় কাতরতা!
কেন শুধু হাতের ইশারায় খুলে পড়ে
কাপড়ের দেয়াল- দেহের সবুজ!

মেঘসহিসের হাত ধরে নেমে আসে
বৃষ্টিঘোড়াদের দল
তাদের সাথে সম্পর্ক কেমন ভাষাবাহিত!
অপেক্ষমান হত্যাকাতরতা দোল খায়
শিকারীদের স্বপ্নে
জঙ্গল পুড়িয়ে কে শেখে
সাপ আর নেউলের ভাষাকলহ।

২২/০৪/১০



তুমি আর কাঁপছ না, হে শব

দলবেঁধে চলে গেছে ক্লান্ত হাটুরে গাভীদের দল
উত্থিত ধর্মনেশা শেষ হয় সীমানা দখলে।
মাঠের পাশে ফেলে যাওয়া আমের খোসা, রাংতা-
ঢুবে আছে মেয়েদের বাহুবন্ধন
বাঁশপাতার ভালোবাসা - সকালের গাঙে।
তুমি আর কাঁপছ না, হে শব!

চুল উড়ছে বাতাসে
ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা কেমন স্থিরতা লাগায় বানরের সভ্যতায়
দূরে দেহসঙ্গীতের রাত বিছানাভরে ধরে রাখে কার স্নেহপ্রবণতা!
ভাবি এই অপেক্ষাও একদিন শেষ হবে-
জলদেশে- মাঝির বিশ্বাসে।
তোমাকে শেষ করে জলবাতাসে লাগাই- কচু পাতার লাবণ্যবিষ্ময়!
আর এই শেষ কাপড়ে বানাই রান্নাবান্নার আগুন।
দেখি এই মাটিউর্বরতা- মেয়েদের জামা ধরে ঢুকে
পড়ে সন্তানের মায়ায়।

তুমি আর কাঁপছনা, হে শব!

০২/০৪/১০






পানি পাহারাদার

পানি পাহারাদারের কাছে থেমে যায়
চিনেবাদামের সংসার।
মানুষের ছায়াঝিনুক গড়িয়ে পড়ে কথাবাণিজ্যে-
লুকিয়ে থাকা টায়ারের কালোয়
বুকের আদিম, ভ্রমণের জাদু।
পাশে গোল মাঠে ছেলেদের ঘোড়ার রেস
লালনীল বেলুন হয়ে উড়ছে
স্বর্ণকেশরি যুবতীদের ভবিষ্যৎ।
যত গতি তত প্রাণচেতনা মাঠ পেরিয়ে
গোল চাকার ঘূর্ণি ধরে বননিবাসে নামছে।

একদিন পানির সহজলভ্যতা আশা হয়ে
সাজানো মিনার- আকাশের পেট ভেদ করে যায়।
কলহনির্ভর শিশুরা এর ওর ন্যাংটো শরীর দেখে-
ভাবছে একদিন সাঁতার কেটে পার হয়ে যাবে
লালদালান শূন্য হাড়ি, আগুনের পাহাড়।
আর অপেক্ষমান অতিথীরা - ট্যান্টের ভেতর ঢুকে
নদী পারাপারের গল্প করছে, সীমানা মাপছে।
দেখছে পানি হরণের ভেতর মিশে আছে-
ভাতৃবধের প্রথম সূত্র।

১৫/০৩/২০১০


লেবুগাছ

ঝুঁকে পড়া লেবুগাছের লাবণ্যে শীতপড়া দেখছি
ঠাণ্ডা বরফ-হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে রঙবেরঙের পথিকছায়া।
ভাবছি নীড়হারাদের দেশে - দূরে যাওয়া অধিষ্ঠান
শিশুদের দোলনা -কোন হাইওয়ে পার হয়ে বাসা বাঁধে
লেবুপাতা, সবুজের কোলাহলে।

হারিয়ে যাওয়া জঙ্গল- মেঘকুলকুলবাড়ি আর
মুদি দোকানের কোলে ঝুলে থাকা আচারের বোতল
আজো ডিগবাজি শেখায় পথভোলাদের।
ছাদে উড়ছে ছেলেদের ঘুড়ি - আকাশে উড়ার সাধনা
তৃপ্তি পায় লালনীল বিছানা - মেয়েদের চাদরে।
ভাবছি চিঠি লিখবো -সৎ স্বীকারোক্তি করবো
শীতপড়া এই কালো বল্কলে, কাঠের দরোজায়।
চির ঘোরলাগা লাল ফরিঙ, স্কুলে দাঁড়ানো ছাত্রকাল
উড়ে আসে ভোরজাহাজের শব্দে -লেবুপাতার শয্যায় ।

২৩/০২/২০১০

1 টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

Obaed ek mridu, ontorlin, jadumoyi vashay kobita lekhe cholechen, jekhane shobdogulo parosparik rosayone ortho toiri kore, je bishoye amra kono purbo dharona korte pari na; shudumatro porar por chokite udvasito hoye uthe ortho o byanjonasoho!

Obaeder kobitay duto japito vugoler uposthiti probol, ekti tar jonmovumi, oporti tar bortoman abasgriho - jekhane tini ovibashi. kobitar bohiraborone ovibashi jogoter drisshoman rup o jiboner nana bivongo; aar ovvontore fele asha swadesher smriti-tarito itihash, songkot o noirajjyer chaya,ja ekjon ovbashi kobir doito jibober dwandikotay uposthit.

তুমি আর কাঁপছনা, হে শব - kobitatir namkorone, othoba uddhrito pongti "উত্থিত ধর্মনেশা শেষ হয় সীমানা দখলে" bole dei kon onchol o somoyer ei uccharon! sovvota niyeo Obaeder royeche irony, manusher sovvota tar upolobdhite dhora dey ek poschatgaami jatra hishebe:"ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা কেমন স্থিরতা লাগায় বানরের সভ্যতায়"...

agami diner prithibite pani niye je songhat o juddher ashongka somajbigganira korchen tar kabbyk ucchoro amra Obaeder kobitay peye jai:

"দেখছে পানি হরণের ভেতর মিশে আছে-
ভাতৃবধের প্রথম সূত্র।"

Obaed kromagoto govir, krantidorshi o suddho hoye uthchen tar kobitay. Tar jonmodine ei kobitagulor path amake sei anondo o upolobdhite pouche dei! Shuvo jonmodin KOBI!

Tushar Gayen
Toronto, 08/09/2010