আমার নতুন কবিতার বই 'শাদা সন্ত মেঘদল' থেকে কয়েকটি কবিতা



















অ্যাকোরিয়াম ২


মাথার উপর দিয়ে ভেসে আসা হাঙর আমাকে কামড়াবে না
হাত দিয়ে ধরার চেষ্টা করি- হা করে তাকিয়ে আছে শিলালিপি
দাঁতের নিবিড় কারুকাজ।
জলদেশে ঘুমিয়ে থাকা সমুদ্রঘাস
ফুটে ওঠা নিঝুম বনপাতার দোলাচল- গ্রামবাঙলা।
আমি নিশ্চিত - কলহপ্রবণতা শেষ জলদালানের কাছে
তারামাছের আনন্দগান দোল খায়
তেড়ে আসা হাঙরের নিশানায়।

হারিয়ে যাওয়া মাছের ভবিষ্যৎ কতো নিরাপদ
আহার করছে আর সাঁতার কাটছে
তোমার শরীর আমার কাছে - পুঁটি না মাগুর!
জলবাস চাই জলনীরবতা
নিরর্থ বাণিজ্যভাষা - ঘুমিয়ে থাকা কচ্ছপের কাছে।





জলবান্ধব


পরিত্রাণের ভাষা এরকম, গীতিময়
মাটির নিচে উপরে বাঁশবাগানের মাথায়
দিনরাত্রি পথে বাজানোর সুর।
আছে যে মরুদ্যান - পায় আবাসন নিম্নকন্ঠধারা
আর বাজে বাঁশি স্রোতউদ্যানঘরে।

ঘুরে ঘুরে আসে সৎবায়ু
বাতাসের ফুল, আসে সমুদ্র ছলনা
ঠিকানা যদি নাই দিলে মধ্যদুপুরে
নীড়হারাদের শুধু সমরক্ষেত্র।
নদী আকুলতায় ঘাসগুলো নীল
শুকিয়ে যাওয়া এই উপত্যকায়
পরাধীন মন চায় - আবাসস্থল।


নির্বিচার এই জলচতুরতা
কে আটকায় তোমাকে দেয়াল স্থাপনে!
বান্ধবের সাথে আজো বাণিজ্য দরকষাকষি
হাত ধোয়ার কাজ রক্তবিনিময়ে ।



যুদ্ধক্ষেত্র


ফেলে গেছ রক্তকম্বলে
পাশে কাঁটাতারের সীমানা
তোমাকে অধিকার অথবা হরণ করি কোন সাহসে!
ভূমিদখলের অভিশাপ নিয়েছি মাথায়
কাছে আসে দূরে যায় শত্রু-ছাউনি;
আশেপাশে জাতিপ্রথা কামুফ্লাজ রীতি
সেহেতু অতি সাবধানতা
সদা মন বাঘ বাঘদাস ।


দেশ অপহরণের মন্ত্র জপি
ট্রেঞ্চের পাশে বন্ধু রাইফেল
উড়ে যায় বোমারু বিমান গুলি খাওয়া পাখি।
কখন শেষ হয় এই ধর্মযুদ্ধ
কখন সরে যায়
হামজার বুক থেকে আবু সুফিয়ানের বল্লম।

কখন ঘন্টা বাজে স্কুলে
কাঁটাতারের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আম্মা
কবর খোঁড়া শেষ হলে-
শাদা পতাকা উত্তোলন।




সরলতা


সরলতা ধরে রাখি
প্রিয় আমগাছ তুমি আমার আত্মীয়।
এই শিকারমুখর জনসভায় তোমার যদি ছায়া পাই
যেমন সতত আম্রবিথীকায়।

পরিহারপ্রবণতা মুদ্রা হয়ে আসে, তবু ভালো লাগে
তবু মানুষের ভালোবাসা চাই।
দূর থেকে কিসব পাঠাও-
বিষখালি মাঠঘরে শত্রু, রাইফেল
কবুতর হানটিঙ- এসব সমাধী বিহ্বলতা
পথে পথে শিকারি যেমন।

একটি যে আগুন তারও ফুলশিখা এই বিভোর বাতাসে।
সরলতা মনপ্রাণ দিয়ে, আগর জ্বালিয়ে অপেক্ষায় থাকি-
তুমি মাংস ব্যবসায়ির পালঙ্ক থেকে ছুটে এসে
আমাকে বিবাহ করো।
কন্ঠভরা সীতাহার, সিনেমা শো - সবকিছু নোনসেন্স
মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ধারণা যেমন।




খুন


একটা কাক আর একটাকে কিভাবে মারে
কবর দেয় পাথরের নিচে
আর আমার ঈর্ষা কাছাকাছি আসে।
রূপ হয়ে বোন সেজে আমাকে ডাকে
দিই জ্বেলে দাবানল ঘাসের মর্মরে
আদমের পরিবারে।

ভাই হাবেল তুমি প্রিতৃপ্রেম চুরি করো
আর আমি দ্বিধাবিভক্ত, বঞ্চিত
যতটুকু পারি ঘৃণা করি
আমার কোরবানি উপেক্ষিত।
যে ঋণ গ্রহণ করি ভালোবাসা প্রতিশোধে
তাই ভার; কাঁধের ভূভাগে পাথরের ভাণ্ড।
তুমি নাও আমি নিই।
বাকীটুকু প্রায়শ্চিত্ত আসমান থেকে নামে
আর লেখা থাকে গরুখামার ফসলের মাঠে।





চিরমাছ


জলসত্য নেচে বেড়ানো মাছেদের স্মরণে
কি ভেজা মখমল আমাদের চিরবসতিকরণ!
আর খাদ্য বিতরণ দেহ-আবাসে।
ভালোবাসায় জড়াই আর গুত্তা খাই
এই অন্ধকারে মন কেবল মাছসারল্য।

মশারীর নিচ থেকে
বউবাচ্চাদের শরীর ভেদ করে
এই মৎস্যপ্রেম আহলাদ
নদীর কিনার ঘেঁষে জলদূত কবিদের বাস।
ঝুলে পড়বে আকাশের চাঁদ
আর তরবারি হাতে হঠাৎ তুমি সিপাহসালার।
মাছের শরীর ফেলে শুধু মাথাটুকু চাও
চাও হত্যাকাণ্ড একলা সৈকতে।

মাছের ভালোবাসা আজো থাকে
নিরামিষভোজীর ঘরে থালার আসনে
আর জানি মৎস্যব্যবসায়ীর কাছে
মাছ কি হেতু প্রজনন প্রিয়।




মল্লিমুক বীচের কাছে



সীতা হরণের কাল শেষ এইখানে।
নদীমাতৃক বাতাস শীর্ষ আহরণে আকাশের
দোল খাওয়া নৌকা।
সমুদ্র বাঘের মতো উঠে পড়ছে দুদিকে
যূপকাষ্ঠ অপহৃত মেঘস্নাত রৌদ্র ভূমিকায়
আর আমাদের চলাকাল যুদ্ধহীন চোখবোজা
জলকাতর স্বদেশ মহাদেশে।


কলহপ্রবণ জ্ঞান, গীতিকথা আজ বাদই দিলাম
শুধু পাতাপতনের শব্দ শুনে টের পাই
পাশে গাঙচিল, মাছের সন্তান।
কিরকম নীল জামানীল পেয়ে যায় এইসব জল
না দেখলে বোঝাই যায় না!
যেন ছোটবেলার রঙিন ঘুড়ি উড়ে উড়ে
আমাদের গ্রামে আলপথে।
গ্রামবাঙলার গণঅনুষ্ঠান-
লোককাহিনীর দরবারে দাও
এই মাতৃপ্রতিম সমুদ্রঘর।
আমি হাত দিয়ে ছুঁবার বাসনা করে
অবসরে ঘুমিয়ে পড়েছি। হায়।



শাদা সন্ত মেঘদল। প্রকাশক: নিসর্গ। প্রাপ্তিস্থান: বাংলা একাডেমী বইমেলা ২০১১ ছোট কাগজ চত্বর।

কোন মন্তব্য নেই: